সার্টিফায়েড হেলমেট নিয়ে উদাসীনতা, ‘বাটি হেলমেট’ ব্যবহার করেন রাইডাররা

Passenger Voice    |    ১১:৩০ এএম, ২০২১-০৯-২৪


সার্টিফায়েড হেলমেট নিয়ে উদাসীনতা, ‘বাটি হেলমেট’ ব্যবহার করেন রাইডাররা

মোটরসাইকেল-চালক ও আরোহীর জন্য সার্টিফায়েড হেলমেট ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। বেশিরভাগ মোটরসাইকেল-চালক ও রাইডার-যাত্রী ব্যবহার করছেন একধরনের ‘হার্ডহ্যাট’। যার প্রচলিত নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাটি হেলমেট’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ‘বাটি হেলমেট’ চালক-রাইডাররা দুর্ঘটনায় আহত হওয়া থেকে বাঁচতে ব্যবহার করেন না। তারা এগুলো ব্যবহার করেন মূলত মামলা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যেই।

সম্প্রতি যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামের এক সংগঠন দাবী করেছে, মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৫ শতাংশই ঘটছে মোটরসাইকেলে। এসব দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আরোহীরা হয় গুরুতর আহত হয়েছেন, অথবা প্রাণ হারিয়েছেন। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাইডার-আরোহীরা বেশিরভাগই পরছেন ‘বাটি হেলমেট’। দুর্ঘটনা থেকে আরোহীকে এসব হেলমেট রক্ষা করতে পারে না।

রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় কেনা এসব 'বাটি'তে কানসহ মাথার বেশিরভাগ অংশই উন্মুক্ত থাকছে। ফলে দুর্ঘটনায় পড়লে চালক-আরোহীরা মাথায় আঘাত পাচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে ভারতে অবস্থিত বিশ্বের উচ্চতম ‘মোটরেবল রোড খারদুংলা পাস’ সামিট করেছেন আবদুল মোমেন রোহিত। তিনি বলেন, ‘ভালো হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে দুই দিক থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। নীতিনির্ধারকদেরও এই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’

আরো পড়ুন: হেলমেট না পরেও ট্রাফিক পুলিশকে ক্ষমতা দেখাল ডিএনসিসি প্রকৌশলী

রোহিত আরও বলেন, ‘প্রথমত এই বাটি হেলমেট বা নন সার্টিফায়েড হেলমেট আমদানি বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মাঠপর্যায়ে যে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করেন, তারা ধাপে ধাপে বাইকারদের সচেতন করতে পারেন। প্রথমে বোঝাবেন, এরপর ছোট ছোট মামলা দেবেন। শেষে বাটি হেলমেটগুলো বাজেয়াপ্ত করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণসচেতনতার জন্য সরকারি উদ্যোগে ক্যাম্পেইন চালাতে হবে। মিডিয়া কাজ করতে পারে। আর হেলমেট ও নিরাপত্তাসামগ্রীর ওপর থেকে কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা উচিত। তাহলে এগুলো সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে।’

দেশের প্রথম মোটরসাইকেল ব্লগ বাইকবিডির প্রতিষ্ঠাতা শুভ্র সেন বলেন, ‘হেলমেট পরার আসল কারণ নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু অনেকে শুধু মামলার ভয়েই মানহীন হেলমেট পরছেন। দুর্ঘটনায় মাথায় অল্প আঘাত লাগলেও ক্ষতি বড় হয়। এসব বাটি হেলমেট কোনো সুরক্ষা দিতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধরুন আপনি একটা বাইক চালাচ্ছেন, যার মূল্য দেড়লাখ টাকা বা দুই লাখ টাকা। আপনি চাইলেই মোটরসাইকেল কেনার সময়ই পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় ভালো সার্টিফায়েড হেলমেট নিতে পারেন।’

পাঠাও চালক রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘ভালো হেলমেটে সুরক্ষা বেশি, তা আমরাও বুঝি। কিন্তু সেগুলোর যে দাম, সব তো হাতের বাইরে।’

আরো পড়ুন: নিম্নমানের হেলমেট বাড়িয়ে দিচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি

গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সিনিয়র রেজিস্ট্রার ডা. তনিমা তাজি আঁখি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে শরীরের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে মাথা। এখানে সামান্য আঘাতও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। রাস্তায় বাটি জাতীয় যেসব হেলমেট দেখা যায়, সেগুলোতে কানসহ মাথার বেশিরভাগ অংশই খোলা থাকে। এতে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হওয়াসহ মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু ভালো হেলমেট পরলে প্রাণহানির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।’

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, তাদের কাজ মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট পরেছেন কি না, তা দেখা। মান নিশ্চিত করা নয়। বিআরটিএ চাইলে এ ধরনের নীতিমালা করতে পারে।

আরো পড়ুন: বছরে মারা যায় ১১শ মানুষঃ বিআরটিএ অদক্ষতায় মোটরসাইকেলের চালক সংকট

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, `আমরা সবসময়ই বলি মাথা পুরো কাভার করবে, এমন হেলমেট পরতে হবে। পুরো মাথা ঢাকা না থাকলে আঘাত পেয়ে প্রাণহানি হতে পারে। এছাড়া বাইকে যেন সবাই হেলমেট পরেন, বিষয়টি আমরা দেখি।’

বিআরটিএ-এর রোড সেফটি বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘এতদিন হেলমেটের মানসংক্রান্ত কোনো নীতিমালা ছিল না। এখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১১১ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে হেলমেটের মান বেঁধে দেওয়ার বিষয়টিও আছে।’ সুপারিশগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান।